একটি চমকে ওঠা তথ্য দিয়েই লেখাটি শুরু করছি। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারী তরুণ-তরুণীর মধ্যে ৪৭ জন বেকার। ভারত ও পাকিস্তানে প্রতি ১০ জন শিক্ষিত তরুণের তিনজন বেকার। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, বেকারদের মধ্যে চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের হার ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। নারী চিকিৎসক-প্রকৌশলীদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ৩১ শতাংশ। এর পরই আছেন উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রিধারীরা। তাঁদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০টি সর্বাধিক বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বাদশ।
শিক্ষিত বেকারের এই অসম্ভব বৃদ্ধির কারণ কী? কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আমরা যে শিক্ষা দিচ্ছি, তা না পারছে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরি করতে, না পারছে সময় ও যুগের চাহিদা মেটাতে। আমাদের সমাজে যারা স্বল্পশিক্ষিত কিংবা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, তারা যেকোনো একটি কাজ পেলেই খুশি হন। কিন্তু শিক্ষিত তরুণদের রয়েছে কায়িক পরিশ্রমের প্রতি প্রচণ্ড অনীহা। সমাজও তাদের হেয় চোখে দেখে।
আগে চাকরি না পেয়ে গ্রামের শিক্ষিত বেকারেরা মিলে একটি স্কুল বা কলেজ করে আরও বেশ কিছু বেকার তৈরি করতেন। এখন স্কুল-কলেজে পড়ে চাকরির সুযোগ যেহেতু কম, সেহেতু পাড়ায় পাড়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলছেন একশ্রেণির স্বঘোষিত শিক্ষা অনুরাগী। যাঁদের প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য, ব্যতিক্রম অবশ্যই আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, কালিমালিপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি নয়, কম। একটি কালিমালিপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও তার উচিত ইউজিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানো। কেননা, তাঁকে কালিমালিপ্ত কোনো বেসরকারি বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কালিমামুক্ত করতে। সম্প্রতি টিআইবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করলে তিনি তাকে হাস্যকর বলে উপহাস করেছিলেন। পরে তাঁর অফিসের এক কর্মকর্তাই এই অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন। বালুতে মুখ গুঁজে ঝড় ঠেকানো যায় না।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ১০-১৫ বছর পর পর শিক্ষা পাঠ্যক্রম হালনাগাদ করা হয়। বাংলাদেশে ৪০ বছর ধরে অধিকাংশ বিষয়ের পাঠ্যক্রম অটুট রাখা হয়েছে। কেবল সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নেতাদের ছবি ও জীবনী বদল হয়। এই ছবি ও জীবনী বদলের শিক্ষা সমাজ ও জীবন—কোনোটারই চাহিদা মেটাতে পারে না।
শিক্ষিত বেকারের এই অসম্ভব বৃদ্ধির কারণ কী? কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। আমরা যে শিক্ষা দিচ্ছি, তা না পারছে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তৈরি করতে, না পারছে সময় ও যুগের চাহিদা মেটাতে। আমাদের সমাজে যারা স্বল্পশিক্ষিত কিংবা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত, তারা যেকোনো একটি কাজ পেলেই খুশি হন। কিন্তু শিক্ষিত তরুণদের রয়েছে কায়িক পরিশ্রমের প্রতি প্রচণ্ড অনীহা। সমাজও তাদের হেয় চোখে দেখে।
আগে চাকরি না পেয়ে গ্রামের শিক্ষিত বেকারেরা মিলে একটি স্কুল বা কলেজ করে আরও বেশ কিছু বেকার তৈরি করতেন। এখন স্কুল-কলেজে পড়ে চাকরির সুযোগ যেহেতু কম, সেহেতু পাড়ায় পাড়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলছেন একশ্রেণির স্বঘোষিত শিক্ষা অনুরাগী। যাঁদের প্রধান লক্ষ্য বাণিজ্য, ব্যতিক্রম অবশ্যই আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, কালিমালিপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেশি নয়, কম। একটি কালিমালিপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও তার উচিত ইউজিসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানো। কেননা, তাঁকে কালিমালিপ্ত কোনো বেসরকারি বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কালিমামুক্ত করতে। সম্প্রতি টিআইবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করলে তিনি তাকে হাস্যকর বলে উপহাস করেছিলেন। পরে তাঁর অফিসের এক কর্মকর্তাই এই অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন। বালুতে মুখ গুঁজে ঝড় ঠেকানো যায় না।
পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ১০-১৫ বছর পর পর শিক্ষা পাঠ্যক্রম হালনাগাদ করা হয়। বাংলাদেশে ৪০ বছর ধরে অধিকাংশ বিষয়ের পাঠ্যক্রম অটুট রাখা হয়েছে। কেবল সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নেতাদের ছবি ও জীবনী বদল হয়। এই ছবি ও জীবনী বদলের শিক্ষা সমাজ ও জীবন—কোনোটারই চাহিদা মেটাতে পারে না।
২.
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৮৭ হাজার। এদের মধ্যে পাস করেছে ৯২.৬৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় সোয়া লাখ। একই বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল নয় লাখ ১৪ হাজার ৬০৩ জন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ছয় লাখ ৯২ হাজার ৬৯০।
এই যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতিবছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বের হচ্ছে, তারা কোথায় যাচ্ছে? এসএসসি উত্তীর্ণদের বড় অংশ এইচএসসিতে ভর্তি হয় এবং এইচএসসিতে উত্তীর্ণদের বড় অংশ স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হয়। তারপর? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে মেধাবীরা ভর্তি হলেও নির্দিষ্ট সময়ে পাস করে বের হবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে যাঁরা ভর্তি হন, তাঁদের চার বছরের কোর্স শেষ করতে সাত বছর লেগে যায়। এরপর মাস্টার্স করতে আরও দেড়-দুই বছর। পড়া শেষ না হতেই চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ শেষ। কমবেশি সেশনজট আছে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই যে মেধা ও তারুণ্যের অপচয়, এর প্রতিকার কী?
প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্তরে পরীক্ষার সিঁড়ি পার করলেও জীবনের সিঁড়ি তাঁরা পার হতে পারেন না। হয়তো এমন বিষয়ে পড়েন যার ব্যবহারিক চাহিদা প্রায় শূন্য। আবার এমন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বের হন যখন চাকরির মেয়াদ পার হয়ে যায়। সরকার শিক্ষানীতি, পরীক্ষাপদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র নিয়ে যত মাথা ঘামাচ্ছে, তার সিকি ভাগ সমাজের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাকে মেলানোর চেষ্টা করছে না। ফলে আমরা শিক্ষার নামে বেকার জনশক্তি তৈরি করছি। পাঠ্যক্রম থেকে শুরু করে পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও আমাদের শিক্ষা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। শিক্ষার উন্নয়নে চাই নিরন্তর অধ্যবসায়, অনুশীলন ও সময়ের চাহিদা মাফিক পরিবর্তন। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা তাঁদের ব্যক্তিজীবনে যেমন, রাষ্ট্রীয় জীবনেও তেমন অধ্যবসায় ও পরিবর্তনকে ভয় পান।
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৮৭ হাজার। এদের মধ্যে পাস করেছে ৯২.৬৭ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে প্রায় সোয়া লাখ। একই বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল নয় লাখ ১৪ হাজার ৬০৩ জন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ছয় লাখ ৯২ হাজার ৬৯০।
এই যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতিবছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বের হচ্ছে, তারা কোথায় যাচ্ছে? এসএসসি উত্তীর্ণদের বড় অংশ এইচএসসিতে ভর্তি হয় এবং এইচএসসিতে উত্তীর্ণদের বড় অংশ স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হয়। তারপর? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে মেধাবীরা ভর্তি হলেও নির্দিষ্ট সময়ে পাস করে বের হবেন, সেই নিশ্চয়তা নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে যাঁরা ভর্তি হন, তাঁদের চার বছরের কোর্স শেষ করতে সাত বছর লেগে যায়। এরপর মাস্টার্স করতে আরও দেড়-দুই বছর। পড়া শেষ না হতেই চাকরিতে প্রবেশের মেয়াদ শেষ। কমবেশি সেশনজট আছে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই যে মেধা ও তারুণ্যের অপচয়, এর প্রতিকার কী?
প্রতিবছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্তরে পরীক্ষার সিঁড়ি পার করলেও জীবনের সিঁড়ি তাঁরা পার হতে পারেন না। হয়তো এমন বিষয়ে পড়েন যার ব্যবহারিক চাহিদা প্রায় শূন্য। আবার এমন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বের হন যখন চাকরির মেয়াদ পার হয়ে যায়। সরকার শিক্ষানীতি, পরীক্ষাপদ্ধতি ও প্রশ্নপত্র নিয়ে যত মাথা ঘামাচ্ছে, তার সিকি ভাগ সমাজের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাকে মেলানোর চেষ্টা করছে না। ফলে আমরা শিক্ষার নামে বেকার জনশক্তি তৈরি করছি। পাঠ্যক্রম থেকে শুরু করে পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও আমাদের শিক্ষা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। শিক্ষার উন্নয়নে চাই নিরন্তর অধ্যবসায়, অনুশীলন ও সময়ের চাহিদা মাফিক পরিবর্তন। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা তাঁদের ব্যক্তিজীবনে যেমন, রাষ্ট্রীয় জীবনেও তেমন অধ্যবসায় ও পরিবর্তনকে ভয় পান।
৩.
বাংলাদেশে অনেক ধরনের অপচয় আছে। সরকারি উন্নয়নকাজে অপচয় আছে, পরিবহন-ঠিকাদারিতে অপচয় আছে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের নামে শ্রম ও অর্থের অপচয় আছে। নেতাদের নামে ব্যানার-তোরণ নির্মাণে অপচয় আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অপচয় হলো তারুণ্যের মেধা ও শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারা। এমনকি কাজে লাগানোর তেমন চেষ্টাও নেই। একজন শিক্ষিত তরুণ বা তরুণীর পেছনে তাঁর পরিবারের যেমন বিনিয়োগ থাকে, তেমনি
বাংলাদেশে অনেক ধরনের অপচয় আছে। সরকারি উন্নয়নকাজে অপচয় আছে, পরিবহন-ঠিকাদারিতে অপচয় আছে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের নামে শ্রম ও অর্থের অপচয় আছে। নেতাদের নামে ব্যানার-তোরণ নির্মাণে অপচয় আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি অপচয় হলো তারুণ্যের মেধা ও শক্তিকে কাজে লাগাতে না পারা। এমনকি কাজে লাগানোর তেমন চেষ্টাও নেই। একজন শিক্ষিত তরুণ বা তরুণীর পেছনে তাঁর পরিবারের যেমন বিনিয়োগ থাকে, তেমনি
থাকে রাষ্ট্রের বা জনগণের বিনিয়োগও। এই বিনিয়োগ উঠিয়ে আনার উত্তম উপায় হলো চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি শিক্ষাব্যবস্থা। আমরা কর্মক্ষম জনশক্তির বদলে কর্ম-অক্ষম জনশক্তি তৈরি করছি বিপুল অর্থ ও বিশাল যজ্ঞের মাধ্যমে। প্রতিবছরই সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ও শিক্ষার্থীদের পাসের হার বেড়ে চলেছে। কিন্তু সেই তুলনায় চাকরির সুযোগ বাড়ছে না।
প্রতিবছর এই যে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন, রাষ্ট্রনেতারা তাঁদের নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। দেশে যেহেতু বিনিয়োগের ক্ষেত্র সীমিত, সেহেতু বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কম। বিদেশে কর্মসংস্থান করার মতো প্রশিক্ষণ ও দক্ষতাও অনেকের নেই। ফলে তাঁরা দুঃসহ বেকারত্বের বোঝা বহন করেন বছরের পর বছর। যাঁদের যেটুকু সম্ভাবনা আছে, তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের ভুল নীতি ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি ছিল, কোটা-পদ্ধতি হ্রাস করে মেধাবী তরুণদের সুযোগ বাড়ানোর। কিন্তু ৪০ বছরেও রাষ্ট্র এ বিষয়ে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষাপদ্ধতি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, তা কতটা মেধাবী তরুণদের জায়গা করে দেবে আর কতটা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করবে, বলা কঠিন। প্রতিবছরই বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও পরীক্ষাপদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার পর গত ১০ মাসেও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এত দিন পাবলিক পরীক্ষার জট ছিল, এখন বিসিএস পরীক্ষায়ও জট দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা রকমের কোটা ও পরীক্ষাপদ্ধতি আবিষ্কার করেন। কিন্তু তাঁরা মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে কোনো ব্যবস্থা নেন না। প্রশাসনে ও শিক্ষাঙ্গনে মেধাবীদের ধরে রাখার চেষ্টা করেন না।
দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ গভীর হতাশায় ভুগছেন এ কারণে যে তাঁদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরির পরীক্ষায় বসারও সুযোগ নেই। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিল সাধারণ ছাত্র পরিষদ। এই পরিষদের সভাপতি আল আমিন রাজুসহ কয়েকজন প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন তাঁদের দাবিদাওয়া জানাতে। তাঁদের মূল দাবি, চাকরির বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছর করতে হবে। এ ব্যাপারে তাঁরা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্পিকার থাকাকালে তাঁর কাছে ধরনা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁদের আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেয়নি। স্পিকার হিসেবে তাঁর যে ক্ষমতা ছিল, রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিশ্চয়ই কিঞ্চিত বেড়েছে।
আমরা এই তরুণদের চোখেমুখে গভীর হতাশা ও ক্লান্তি লক্ষ করছি। রাজপথে আন্দোলন করে তাঁরা পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছেন। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো ফল পাননি। এভাবে আমরা কি একটির পর একটি প্রজন্ম নষ্ট হতে দিতে পারি? পারি না। তাহলে কেন এসব ম্লানমুখ তরুণদের কথা ভাবি না? এই তরুণেরা তাঁরা বাড়ি যেতে পারছেন না লজ্জায়, মা-বাবার কাছে টাকা চাইতে পারছেন না, মেস ভাড়া করে থাকার পয়সা নেই৷ তাই আজ এ-বন্ধুর মেসে, কাল ও-বন্ধুর বাসায় ক্ষণিকের আশ্রয়ী হয়ে থাকেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কেউ কেউ রেলস্টেশন কিংবা বাস টার্মিনালেও রাত কাটাচ্ছেন। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় পড়লাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এক তরুণ চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কেবল একজন নন, বহু শিক্ষিত তরুণ চাকরি না পেয়ে, জীবনের দিশা হারিয়ে এভাবে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন, কেউ বা লিপ্ত হচ্ছেন অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজে।
আমরা যখন এই তরুণদের হতাশার কথা লিখছি, তখন রাজনীতি-আশ্রয়ী আরেক শ্রেণির তরুণ মারামারি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। রাজনীতির বড় ভাইয়েরা, সাবেক ও বর্তমান সাংসদেরা তাঁদের প্রভাববলয় বাড়াতে তরুণদের ব্যবহার করছেন। কেউ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। এই শিক্ষিত বেপথু তরুণেরা সব সময়ই ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হন। কিন্তু এর বাইরে যে লাখ লাখ তরুণের জীবনের কোনো গন্তব্য নেই, নিশানা নেই; সংসারে তাঁরা পরিত্যাজ্য, রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে অচ্ছুত।
এই তরুণেরা কোথায় যাবেন? তবে এ-ও সত্য যে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো সুষ্ঠু সমাধান নয়। তরুণদের দাবি, সময়মতো শিক্ষাজীবন শেষ করাতে হবে, চার বছরের অনার্স কোর্স সাত বছরে শেষ করা চলবে না। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এ রকম অদ্ভুত ও আত্মঘাতী নিয়ম আছে বলে জানা নেই। প্রতিযোগী ভারত বা শ্রীলঙ্কায় যেখানে একজন শিক্ষার্থী ২২-২৩ বছরে শিক্ষাজীবন শেষ করেন, সেখানে বাংলাদেশে ২৯-৩০ বছর কেন লাগে? এই অপচয়ের কী যুক্তি আছে? দয়া করে মাননীয় ও মাননীয়ারা জানাবেন কি?
প্রতিবছর এই যে লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন, রাষ্ট্রনেতারা তাঁদের নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। দেশে যেহেতু বিনিয়োগের ক্ষেত্র সীমিত, সেহেতু বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা কম। বিদেশে কর্মসংস্থান করার মতো প্রশিক্ষণ ও দক্ষতাও অনেকের নেই। ফলে তাঁরা দুঃসহ বেকারত্বের বোঝা বহন করেন বছরের পর বছর। যাঁদের যেটুকু সম্ভাবনা আছে, তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারের ভুল নীতি ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি ছিল, কোটা-পদ্ধতি হ্রাস করে মেধাবী তরুণদের সুযোগ বাড়ানোর। কিন্তু ৪০ বছরেও রাষ্ট্র এ বিষয়ে একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষাপদ্ধতি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, তা কতটা মেধাবী তরুণদের জায়গা করে দেবে আর কতটা গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করবে, বলা কঠিন। প্রতিবছরই বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও পরীক্ষাপদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার পর গত ১০ মাসেও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এত দিন পাবলিক পরীক্ষার জট ছিল, এখন বিসিএস পরীক্ষায়ও জট দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা রকমের কোটা ও পরীক্ষাপদ্ধতি আবিষ্কার করেন। কিন্তু তাঁরা মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে কোনো ব্যবস্থা নেন না। প্রশাসনে ও শিক্ষাঙ্গনে মেধাবীদের ধরে রাখার চেষ্টা করেন না।
দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ গভীর হতাশায় ভুগছেন এ কারণে যে তাঁদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরির পরীক্ষায় বসারও সুযোগ নেই। চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিল সাধারণ ছাত্র পরিষদ। এই পরিষদের সভাপতি আল আমিন রাজুসহ কয়েকজন প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন তাঁদের দাবিদাওয়া জানাতে। তাঁদের মূল দাবি, চাকরির বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছর করতে হবে। এ ব্যাপারে তাঁরা বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্পিকার থাকাকালে তাঁর কাছে ধরনা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁদের আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস বাস্তবে রূপ নেয়নি। স্পিকার হিসেবে তাঁর যে ক্ষমতা ছিল, রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিশ্চয়ই কিঞ্চিত বেড়েছে।
আমরা এই তরুণদের চোখেমুখে গভীর হতাশা ও ক্লান্তি লক্ষ করছি। রাজপথে আন্দোলন করে তাঁরা পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছেন। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো ফল পাননি। এভাবে আমরা কি একটির পর একটি প্রজন্ম নষ্ট হতে দিতে পারি? পারি না। তাহলে কেন এসব ম্লানমুখ তরুণদের কথা ভাবি না? এই তরুণেরা তাঁরা বাড়ি যেতে পারছেন না লজ্জায়, মা-বাবার কাছে টাকা চাইতে পারছেন না, মেস ভাড়া করে থাকার পয়সা নেই৷ তাই আজ এ-বন্ধুর মেসে, কাল ও-বন্ধুর বাসায় ক্ষণিকের আশ্রয়ী হয়ে থাকেন। তাঁরা জানিয়েছেন, কেউ কেউ রেলস্টেশন কিংবা বাস টার্মিনালেও রাত কাটাচ্ছেন। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় পড়লাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এক তরুণ চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কেবল একজন নন, বহু শিক্ষিত তরুণ চাকরি না পেয়ে, জীবনের দিশা হারিয়ে এভাবে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন, কেউ বা লিপ্ত হচ্ছেন অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজে।
আমরা যখন এই তরুণদের হতাশার কথা লিখছি, তখন রাজনীতি-আশ্রয়ী আরেক শ্রেণির তরুণ মারামারি, দখলবাজি ও চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। রাজনীতির বড় ভাইয়েরা, সাবেক ও বর্তমান সাংসদেরা তাঁদের প্রভাববলয় বাড়াতে তরুণদের ব্যবহার করছেন। কেউ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, কেউ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। এই শিক্ষিত বেপথু তরুণেরা সব সময়ই ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হন। কিন্তু এর বাইরে যে লাখ লাখ তরুণের জীবনের কোনো গন্তব্য নেই, নিশানা নেই; সংসারে তাঁরা পরিত্যাজ্য, রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে অচ্ছুত।
এই তরুণেরা কোথায় যাবেন? তবে এ-ও সত্য যে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো সুষ্ঠু সমাধান নয়। তরুণদের দাবি, সময়মতো শিক্ষাজীবন শেষ করাতে হবে, চার বছরের অনার্স কোর্স সাত বছরে শেষ করা চলবে না। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এ রকম অদ্ভুত ও আত্মঘাতী নিয়ম আছে বলে জানা নেই। প্রতিযোগী ভারত বা শ্রীলঙ্কায় যেখানে একজন শিক্ষার্থী ২২-২৩ বছরে শিক্ষাজীবন শেষ করেন, সেখানে বাংলাদেশে ২৯-৩০ বছর কেন লাগে? এই অপচয়ের কী যুক্তি আছে? দয়া করে মাননীয় ও মাননীয়ারা জানাবেন কি?
সূত্র: প্রথম আলো: http://www.prothom-alo.com/opinion/article/303751/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A7%88%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE?print=1#jadewits_print